কেরানীগঞ্জে অবৈধ সিসা কারখানায় দূষণ, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
কালবেলা
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২৪ এ ২৪:৩৫
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের আব্দুলাহপুর করেরগাঁও এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিসা গলানোর কারখানা। এসব কারখানায় নষ্ট ও বাতিল ব্যাটারি এবং পুরোনো লোহার বর্জ্য এনে গলানো হচ্ছে।
বর্জ্য গলানোর সময় এর ক্ষতিকারক ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে স্থানীয় মানুষের, দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসল ও জমি। পাশাপাশি এখানে কর্মরত কর্মচারীরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। শুধু তাই-ই নয়, সিসা কারখানার আশপাশে জন্মানো ঘাস খেয়ে হুমকির মুখে পড়ছে পশুপাখিও। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাসের পর মাস চলে আসছে এই কারখানা। কারখানাটির কাগজপত্র দূরে থাক, নেই কোনো সাইনবোর্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানার ভেতরে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির উপরের অংশ খুলে প্লেট বের করছে, কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করছে। এসব শ্রমিক পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও সিসার কাজ করে রাত-দিন পাশের পুকুরে হাত-মুখ ধুয়ে থাকে। ফলে পানির রং কালচে আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় টিনের বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ডবিহীন গড়ে ওঠা ওই কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা পোড়ানো হচ্ছে। এতে কারখানার আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে জমির ফসল ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি গাছপালা ও সবজির ক্ষতি হচ্ছে। অনেকের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে সিসা কারখানাটি বন্ধসহ সিসা তৈরিতে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এলাকাবাসী।
তবে কারখানার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কালাম বলেন, জাহিদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, জহির, হারুন, কালু মিয়া, সুমন এই ছয়জন মালিক পার্টনারে এই কারখানা পরিচালনা করেন। এই কারখানায় ২৫-৩০জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কারখানার শ্রমিক বলেন, গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। অন্য কাজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যাটারি কারখানায় কাজ করছি। অন্য কোথাও কাজ না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই কাজ করব।
চিকিৎসকরা বলছেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতিকর। এ সকল কারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবনও মারাত্মক হুমকির মুখে থাকে।
সিসা তৈরির কারখানার কোনো অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে কারখানা মালিক জাহিদুল ইসলাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেননি বলে জানান।
কেরানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আবু রিয়াদ বলেন, কারখানার বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।